বেল খাওয়ার সঠিক সময় - কখন বেল খেলে উপকার পাবো?

বেল পাতার জাদুকরী গুনাগুন বেল হাজারো গুনাগুন ও ভিটামিন ভরপুর।আপনি যদি নিয়মিত বেল খান তাহলে আপনার কি কি রোগ দূর হবে সেই সম্পর্কে জানতে পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন।আজকের এই পোস্টে বেল খাওয়ার সঠিক সময় ও খালি পেটে বেল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
বেল খাওয়ার সঠিক সময় - কখন বেল খেলে উপকার পাবো?
বেল খেলে পেট পরিষ্কার থেকে শুরু করে ত্বক সুন্দর থাকে হার্ট ভালো থাকে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে এছাড়াও আরো অনেক উপকার পাওয়া যায় আপনি যদি বেলের পরিপূর্ণ উপকার পেতে চান তাহলে আপনাকে জানতে হবে বেল খাওয়ার সঠিক সময় এবং নিয়ম সম্পর্কে আপনি যদি সঠিক সময়ে এবং সঠিক নিয়মে না খান তাহলে আপনি কখনোই কিন্তু পরিপূর্ণ উপকার পাবেন না। তাই আজকের এই পোস্টে দেখুন বেল খাওয়ার সঠিক সময় ও খালি পেটে বেল খাওয়ার উপকারিতা।

বেল

বন্ধুরা আমরা সবাই বেল ফলটির সাথে পরিচিত তাই না? আমরা সবাই বেল খেয়ে থাকি কিন্তু আপনি কি জানেন এই বেল খাওয়ার কত উপকারিতা রয়েছে? বেল হাজারও ভিটামিন ও পুষ্টিতে ভরপুর।বেলে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি ,রিবোফ্লাভিন, পটাশিয়াম ,ক্যালসিয়াম , অ্যান্টি ফাঙ্গাল ও অ্যান্টি প্যারাসাইট, ফাইবার,ভিটামিন বি১,ভিটামিন বি৬ এবং ভিটামিন বি১২ উপদান।

এই উপাদানগুলো শরীরে সামগ্রিক বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য অনেক প্রয়োজনীয়।বেলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন।

বেল খাওয়ার সঠিক সময়

উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন শরীরে সামগ্রিক বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য বেল কত উপকারী। তবে আপনি বেলের পরিপূর্ণ উপকার তখনই পাবেন যখন আপনি বেল সঠিক নিয়মে খাবেন।সঠিক নিয়মে না খেলে আপনি কিন্তু কখনই বেলের পরিপূর্ণ উপকারগুলো পাবেন না তাই বেল খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জানতে নিচে দেখুন।

বেল খাওয়ার সঠিক সময় হলো দুপুরের কিংবা সকালে উঠে। আপনি যদি সকালে উঠে বেলের শরবত কিংবা বেলের চাটনি খান তাহলে আপনি সারাদিন কাজে অনেক এনার্জি পাবেন এবং আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।বেল বিভিন্ন পুষ্টিগুনে ভরপুর।বেল খেলে আপনার পেট সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্ত সমস্যা দূর হবে।

কাজ করতে করতে যখন নিজেকে ক্লান্ত লাগবে তখন আপনি চাইলে এক গ্লাস বেলের শরবত খেয়ে নিতে পারেন এতে আপনার মধ্যে কাজ করার জন্য এনার্জি আরো বৃদ্ধি পাবে এবং কাজে মন বসবে। এনার্জি বৃদ্ধির পাশাপাশি বেল হজম শক্তিকে আরো উন্নত করে তুলবে।

গরমকাল বেল খাওয়ার জন্য উপযুক্ত সময় এই সময়ে অতিরিক্ত গরমের কারণে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। এ সময় বেল খেলে আপনার পেট ঠান্ডা থাকার পাশাপাশি মেজাজও ঠান্ডা থাকবে। এজন্য আপনি লক্ষ্য করবেন গরমকালে বেলের চাহিদা অনেক বেশি বেড়ে যায়।

তবে এখন তো শীতকাল, এই শীতকালে ঘনঘন বেলের শরবত না খাওয়াই ভালো।কারণ বেল যেহেতু ঠান্ডা জিনিস, বেল আপনার পেটকে ঠান্ডা রাখে ,ঠিকই কিন্তু বেল শীতকালে খাওয়ার ফলে আপনার ঠান্ডা লেগে যেতে পারে এই জন্য আমার মতে এই শীতকালে ঘন ঘন বেলের শরবত না খাওয়াই ভালো।

তবে বেল আপনি যেই সময়েই খান না কেন আপনাকে কিন্তু সঠিক নিয়ম জানতে হবে সঠিক নিয়ম ছাড়া কিন্তু আপনি কখনোই পরিপূর্ণ উপকার পাবেন না।এইজন্য বেল খাওয়ার সঠিক নিয়ম জানতে নিচে দেখুন;
বেল খাওয়ার নিয়ম
আপনি নিশ্চয়ই বেল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন। আপনি যদি নিয়মিত সকালে এক গ্লাস করে বেলের শরবত খান তাহলে আপনার স্কিন থেকে ব্রণ জাতীয় যাবতীয় সমস্যা দূর হবে ,আপনার হজম শক্তি ভালো হবে ,গ্যাস দূর হবে ,ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে ,উচ্চ রক্তচাপের আশঙ্কা দুর হবে। তবে এইসব উপকার আপনি তখনই পাবেন

যখন আপনি বেল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানবেন এবং বেল সঠিক নিয়মে খাবেন। চলুন তাহলে আর দেরি না করে বেল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে আসি;

বেল কাঁচা হোক বা পাকা দুটি কিন্তু অনেক উপকারী এবং দুটির ভিন্ন ভিন্ন উপকারিতা রয়েছে। নিচে পাকা ও  কাঁচা বেল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে দেওয়া রয়েছে একবার দেখে নিন;

কাঁচা বেল খাওয়ার নিয়ম

নিয়ম ১: পাকা বেলে যেমন হাজারো উপকারিতা রয়েছে তেমনি কিন্তু কাচা বেলেও হাজারো উপকারিতা রয়েছে। আপনি যদি কাঁচা বেল সিদ্ধ করেন তাহলে কাঁচা বেল থেকেও পাকা বেলের মতো সুগন্ধি পাওয়া যায়। তবে এই দুইটির উপকারিতা কিন্তু একটু ভিন্ন। সব সময় বাজারে পাকা বেল পাওয়া যায় না

অনেক সময় কাঁচা বেল বাসায় রেখে দেয় পাকানোর জন্য।তবে এটি কিন্তু সময় সাপেক্ষ। আপনি চাইলে কাঁচা বেলকে সিদ্ধ করে শরবত বানাতে পারেন এভাবেও অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়।আপনি যদি কাঁচা বেলের শরবত বানাতে না পারেন তাহলে নিচে দেওয়া রেসিপি একবার দেখে নিন;
কাঁচা বেলের সরবত
  • কাঁচা বেল এর শরবত বানানোর জন্য প্রথমে একটি কাঁচা বেল নিন সেটি ভালোভাবে ধুয়ে নিন তারপর সেটি প্রেসার কুকার অথবা হাড়িতে দিয়ে ভালো ভাবে সিদ্ধ করে নিন।
  • সিদ্ধ হয়ে গেলে বেলটি ফাটিয়ে তার মধ্যে থেকে আসগুলো বের করে নিন।
  • তারপর বেলের আঁশগুলো একটি গ্লাসের মধ্যে সংরক্ষণ করুন তার মধ্যে এক থেকে দুই চা চামচ লেবুর রস ,দুই থেকে তিন চা চামচ মধু দিয়ে গুলিয়ে নিন
  • তার মধ্যে স্বাদ বাড়ানোর জন্য আপনি চাইলে ধনিয়া পাতা এড করতে পারেন।
নিয়ম ২: কাঁচা বেল খাওয়ার আরো একটি উপায় রয়েছে।সেটি হলো কাঁচা বেলকে থেঁতো করে চাটনি বানিয়ে খাওয়া। এখান থেকে কিন্তু পরিপূর্ণ পুষ্টি লাভ করা সম্ভব কারণ আপনি যখন বেলকে সিদ্ধ করেন তখন অনেক পুষ্টিগুন নষ্ট হয়ে যায় কিন্তু আপনি যদি কাঁচা বেল থেতো করে চাটনি বানিয়ে খান এখান থেকে কিন্তু আপনি পরিপূর্ণ পুষ্টি লাভ করতে পারবেন। আপনি যদি না জেনে থাকেন যে কাঁচা বেল দিয়ে কিভাবে চাটনি বানাতে হয় তাহলে নিচে দেওয়া রেসিপি একবার দেখে নিন;
কাঁচা বেলের চাটনি
  • কাঁচা বেলের চাটনি বানানোর জন্য প্রথমে একটি বেল নিন সেটি ভালোভাবে ধুয়ে নিন
  • তারপর বেল টি ফাটিয়ে তার আঁশগুলোকে ভালোভাবে থেঁতো করে নিন।
  • আপনি চাইলে এখানে ব্লেন্ডার ব্যাবহার করতে পারেন। 
  • থেতো হয়ে গেলে তার মধ্যে পেঁয়াজকুচি ,হালকা লবণ ,মরিচ এবং চাইলে একটু সরিষার তেল দিয়ে সুন্দরভাবে মাখিয়ে নিন।
ব্যস হয়ে গেল কাঁচা বেলের চাটনি।
আপনি যদি সপ্তাহে ৩-৪ বার এই কাঁচা বেলের চাটনি খান তাহলে আপনার পেট সংক্রান্ত সমস্যা সমস্ত সমস্যা দূর হবে।আশা করছি আপনি বুঝতে পেরেছেন কাঁচা বেল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে এবার চলুন আমরা জেনে আসি পাকা বেল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত।

পাকা বেল খাওয়ার নিয়ম

নিয়ম ১: আপনি যদি পাকা বেলের পরিপূর্ণ উপকার পেতে চান তাহলে পাকা  বেল খালিমুখে খাওয়ার চেষ্টা করবেন। টাকাতে চাটনি বানিয়ে অথবা শরবত বানিয়ে খেলে অনেক পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়। খালি মুখে করার চেষ্টা করবেন এতে পাকা বেলের পরিপূর্ণ উপকার লাভ করা সম্ভব।পাকা বেল মিষ্টি হোক আর না হোক ভালোভাবে ধুয়ে

সেটি ফাটিয়ে ব্যাস খাওয়া শুরু করে দিন। বন্ধুরা পাকা বেলের অনেক উপকারিতা আপনি জানলে অবাক হবেন যে শুধুমাত্র একটি বেল থেকে আপনার পেট পরিষ্কার হবে, হজম শক্তি ভালো হবে ,হার্ট সুস্থ থাকবে ,ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমবে, ওজন কমবে  এবং ত্বক সুন্দর থাকবে ব্রণ ও কালচে দাগ দূর হবে।
নিয়ম ২: পাকা বেল বেশিরভাগ মানুষ শরবত বানিয়ে খায়।এটি খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি উপকারী। বিশেষ করে গরমকালে পাকা বেলের চাহিদা অনেক বেশি বেড়ে যায়।কারণ গরমকালে সারাদিন খাটাখাটুনির পর এক গ্লাস বেলের শরবত যেন অমৃত। আপনি চাইলে পাকা বেল এর শরবত বানিয়েও খেতে পারবেন। পাকা বেলের শরবত কিভাবে বানাতে হয় না জানলে নিচে একবার দেখে নিন;
পাকা বেলের শরবত
  • শরবত বানানোর জন্য একটি পাকা বেল নিন সেটি ভালোভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
  • তারপর সেটি ফাটিয়ে তার মধ্যে আঁশগুলো বের করে নিয়ে একটি গ্লাসে সংরক্ষণ করুন।
  • তার মধ্যে 1 থেকে 2 চা চামচ চিনি ও লেবুর রস মিশিয়ে শরবত বানিয়ে ফেলুন।শরবত বানানো অনেক সোজা তবে এই এক গ্লাস শরবতে হাজার হাজার উপকারিতা রয়েছে।
আশা করছি আপনি বুঝতে পেরেছেন পাকা বেল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে এবার চলুন আমরা জেনে আসি খালি পেটে বেল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।

খালি পেটে বেল খাওয়ার উপকারিতা

উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন বেল খাওয়ার হাজারো উপকারিতা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম কয়েকটি হলো পেট পরিষ্কার করে ,হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, ত্বক সুন্দর রাখে, হার্ট সুস্থ রাখে এবং ডায়াবেটিকস ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়। তবে আপনি যদি খালি পেটে বেল খান

তাহলে কিন্তু আপনি আরো বেশি উপকৃত হবেন।সকালে উঠে খালি পেটে বেল খেলে হজম শক্তি অনেক ভালো হয় এবং যদি আপনার আমাশয় অথবা ডায়রিয়া থাকে তাহলে আপনি খুব দ্রুত ডায়রিয়া অথবা আমাশয় থাকেন রেহাই পাবেন।এইজন্য চেষ্টা করবেন রোজ সকালে উঠে খালি পেটে এক গ্লাস বেল খাওয়ার।

সকালে উঠে খালি পেটে এক গ্লাস বেলের শরবত খেলে সারাদিন খাটাখাটুনি করার জন্য অনেক এনার্জি আসবে এবং আপনার শরীর চাঙ্গা থাকবে।আপনি যেই সময়ে খান না কেনো বেলের উপকারিতা অনেক যা ১-২ লাইনে বলা সম্ভব নয় 

বেলের উপকারিতা ও অপকারিতা

আপনি যদি বেলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমি আপনাকে বলব বেলের উপকারিতা ছাড়া অপকারিতা কিছুই নেই। বেল একটি ঔষধি ফল যা শুধুমাত্র পুষ্টি ও ভিটামিনের ভরপুর এখানে ক্ষতিকর কোন পদার্থ নেই যার মাধ্যমে আমরা অপকার হতে পারে। আজ থেকে চেষ্টা করে নিয়মিত বেল খাওয়ার বেল খেলে আপনার সমস্ত সমস্যা ধীরে ধীরে দূর হবে। বাইরে জাঙ্ক ফুড ও ফাস্টফুড খেয়ে শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাই এর জন্ম না দিয়ে, বেশি বেশি বেল খান এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করুন।

লেখকের শেষ কথা

আজকের এই পোস্টে আলোচনা করলাম বেল খাওয়ার সঠিক সময় ও খালি পেটে বেল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।আজকের এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই একটি কমেন্ট করে জানাবেন।আর হ্যাঁ এমন পোস্ট আরো পেতে এই ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করবেন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ডিজিটাল লাইফ স্টাইলের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url