মাথায় উকুন কেন হয় - উকুন দূর করার উপায়
অনেকের প্রশ্ন থাকে মাথায় উকুন কেন হয় ? মাথার উকুন হলো এক ধরনের ক্ষুদ্র উপদ্রব্য যা মাথার ত্বক থেকে রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকে।বেশিরভাগ স্কুল বয়সী বাচ্চারা এবং বাচ্চার পরিবারের লোকজন এই উকুনের সমস্যায় ভোগেন।এই উকুন গুলো ছোঁয়াচে রোগের মত একজনের থেকে অন্যজনের মাথায় ছড়িয়ে পড়ে।আজ এই পোস্টে মাথায় উকুন কেন হয় এবং উকুন দূর করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
মাথায় উকুন কেন হয় - ভূমিকা
মাথায় উকুন হবার বিশেষ কোনো কারণ নেই যে কোন কারোর মাথায় উকুন হতে পারে উপর আজকাল সাধারণ সমস্যা। তবে অনেকেই বলে মাথার চুল ঠিকভাবে পরিষ্কার না করলে অথবা অপরিষ্কার জীবন-যাপন করলে উকুনের সমস্যা দেখা দেয় এ ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। সাধারণত উকুন হলো ক্ষুদ্র উপদ্রব্য যা ছোঁয়াচে রোগের মত একজন থেকে অন্যজনের মাথায় ছড়িয়ে পড়ে।যদিও উকুন কোন বড় রোগ বহন করে না , তবুও বিষয়টি বিরক্তিকর এবং অস্বস্তিকর।
মাথায় উকুন কেন হয় ?
মাথার উকুন একটি ছোঁয়াচে রোগের মত একজন থেকে অন্যজনের কাছে ছড়িয়ে যায়। উকুনে আক্রান্ত এমন ব্যাক্তির যেকোনো জিনিসপত্র আমরা ব্যবহার করলে
আমাদের মাথা চলে আসতে পারে।সহজ ভাষায় উকুনে আক্রান্ত ব্যক্তির মাথার হেলমেট, চিরুনি, ব্রাশ, জামাকাপড়, বিছানার চাদর ও বালিশের কভার এগুলো যদি আমরা
ব্যবহার করি তাহলে আমাদের মাথাতেও উকুন চলে আসতে পারে।উকুন একটি ক্ষুদ্র উপদ্রব্য এটি অন্যান্য পোকামাকরের মত লাফালাফি অথবা হামাগুড়ি দিতে পারে না।
এটা সাধারণত একজন থেকে আরেকজনের কাছে স্থানান্তরিত হয়।স্কুল বয়সী বাচ্চা এবং বাচ্চাদের পরিবারের এই সমস্যাটি বেশি দেখা দেয় কারণ তারা এই স্কুলে আরও
বাচ্চাদের সাথে মেলামেশা করে খেলাধুলা করে ফলে একজনের মাথায় উকুন থাকলে সেখান থেকে আরো চার পাঁচ জনের মাথায় উকুন স্থানান্তরিত হয়।এখন আপনি
ভাবতে পারেন বাসার পোষা প্রাণী কুকুর বিড়াল এগুলোর থেকে উকুন ছড়ায় কিন্তু না।উকুন বিশেষ করে মাথা থেকে মাথার সংস্পর্শে ছড়িয়ে পড়ে।
উকুন দূর করার উপায়
উকুন একটি সাধারন সমস্যা তবে আপনি কিছু ঘরোয়া উপায়ের মাধ্যমে আপনার মাথা থেকে উকুন দূর করতে পারেন।ইউটিউব এবং গুগলে অনেক ভিডিও, আর্টিকেল রয়েছে
যে কিভাবে একদিনে উকুন দূর করা যায় তবে আমার মত এগুলো সব কিছুই ফেক এবং ভুয়া।একদিনে মাথা থেকে সমস্ত উকুন দূর করা কখনোই সম্ভব নয়। আপনি যদি উকুন
দূর করতে চান তাহলে মাথায় নিয়মিত অলিভ অয়েল তেল অথবা নারকেল তেল ব্যবহার করবেন।তেল লাগানোর পর সরু দাত যুক্ত চিরুনি দিয়ে আচরাতে পারেন আবার
আপনি গোসল করার পর নিয়মিত ভেজা চুল চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ান তাহলে উকুন মাথা থেকে নিচে ঝড়ে পড়বে। মাথা থেকে উকুন দূর করার এটি সবচেয়ে কার্যকরী একটি উপায়
বহু বছর থেকে মানুষের উপায়টি অনুসরণ করে আসছেন এর পাশাপাশি আপনি চাইলে নিটপিকিং করতে পারেন অথবা পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করতে পারেন।
পেট্রোলিয়াম জেলি চুলে লাগিয়ে চুল সরুদাত যুক্ত চিরুনি দিয়ে আঁচড়ালে উকুন গুলো সমস্ত নিচে পড়ে যাবে কারণ পেট্রোলিয়াম জেলি আঠালো পদার্থ যা থেকে উকুন
বেরোতে পারে না ফলে খুব সহজেই উকুনকে দূর করা সম্ভব।এভাবে আপনি যদি ৭ থেকে ৮ দিন এই টিপসগুলো অনুসরণ করেন তাহলে উকুন অনেকাংশে আপনার মাথা
থেকে কমে যাবে।এগুলো ঘরোয়া পদ্ধতির পাশাপাশি আপনি চাইলে কিছু উকুন নাশক শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন যেগুলো সমস্ত প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি এবং সাইড ইফেক্ট ছাড়াই আপনার চুলকে পরিষ্কার করবে
এবং চুল থেকে সমস্ত উকুন এবং উকুনের ডিমগুলোকে দূর করতে সাহায্য করবে।এছাড়াও উকুন কে গোড়া থেকে দূর করার জন্য ঘরোয়া কিছু কার্যকারী উপায় সম্পর্কে নীচে বিস্তারিত আলোচনা করলাম।
* পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে
উকুন দূর করতে চাইলে সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।নিজে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার পাশাপাশি উকুন আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ রয়েছে এমন জিনিসপত্র সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে
অর্থাৎ যেমন মাথার হেলমেট, চিরুনি ,ব্রাশ ,বিছানার চাদর, বালিশের কভার এগুলো সব কিছু পরিষ্কার রাখতে হবে কারণ উকুন এগুলো থেকেও স্থানান্তরিত হতে পারে।
* নিটপিকিং করতে হবে
উকুন সারানোর ঘরোয়া সেরা পদ্ধতিগুলোর মধ্যে একটি হলো নিটপিকিং।এটি হলো উকুন সরানোর সবচেয়ে প্রাচীন এবং কার্যকর পদ্ধতি। ভেজা চিরুনি দিয়ে চুল আছে তাহলে উকুন দূর হতে পারে
কিন্তু উকুনের ডিম অথবা নিটগুলো কিন্তু চুলের মধ্যে রয়ে যায়। ৭ থেকে ৮ দিন পর সেই ডিমগুলো আবার উকুনে রূপান্তরিত হয়।এভাবে কখনোই উকুন যেন দূর হয় না এজন্য
নিটপিকিং ব্যবহার করতে হবে। নিটপিকিং করলে চুল থেকে সমস্ত নিটগুলো দূর হবে। নিটপিকিং বলতে বোঝায় আঙ্গুলের সাহায্যে মাথার ত্বক থেকে স্ট্র্যান্ড দিয়ে নিটগুলোকে সরিয়ে ফেলা। এই পদ্ধতিটি অনেক প্রাচীন হলেও কার্যকারী।
* টি ট্রি অয়েল লাগাতে হবে
কখন দূর করার জন্য কার্যকরী উপায় গুলোর মধ্যে একটি হল টিটরি লাগানো। এই তেলের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি ফাংগাল এবং অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল উপাদান যা উকুন
এবং ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কঠোরভাবে লড়াই করে উকুনকে দূর করে। এই তেলটি উকুন দূর করার পাশাপাশি চুলে থাকা উকুনের ডিম গুলো কেউ দূর করে।ভালো ফলাফল পেতে
প্রতি সপ্তায় দুই থেকে তিনবার এই তেলটি মাথায় ব্যবহার করবেন।২-৩ ফোঁটা তেল আঙ্গুলের সাহায্যে মাথার ত্বকে হালকা করে ম্যাসাজ করবেন যেনো তেল গুলো চুলের ভিতরে
প্রবেশ করতে পারে। তেল দিয়ে চুলটিকে শক্তভাবে বেঁধে রাখবেন।২-৩ ঘন্টা পর হালকা গরম পানি দিয়ে চুলটি ধুয়ে ফেলবেন।তারপর ভেজা চুল সরু দাঁতযুক্ত চিরনি দিয়ে আঁচড়াবেন।
এতে মাথায় থাকা উকুন গুলো পানিতে চুপসে থাকবে এবং পালাতে পারবে না তখন আঁচড়ালে তারা সহজেই তারা নিচে ঝরে পড়বে।
* নিম পাতা
নিম পাতাতে রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিসেপটিক উপাদান যা উকুন দূর করতে সাহায্য করে এছাড়াও নিমে রয়েছে আজাদিরেছটিন (Azadirechtin) এবং কীটনাশক
যা চুল থেকে থেকে উকুন দূর করার পাশাপাশি উকুনের ডিম গুলোকেও দূর করতে সাহায্য করে। উকুন দূর করার ঘরোয়া কার্যকরী উপায় গুলোর মধ্যে একটি হল নিম পাতা।
নিমপাতা একটি প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদান। আপনার মাথায় যদি অতিরিক্ত ওপেন থাকে তাহলে আপনি খুব সহজে নিম পাতার মাধ্যমে উকুন দূর করতে পারবেন।
জানেন নিন কিভাবে ব্যাবহার করতে হয়;
এক কাপ নিম পাতা সিদ্ধ করে রস বের করে নিতে হবে।তারপর আধা কাপ নিম পাতা পাটায় বেটে সেই নিম পাতার সাথে রস মিশিয়ে মাথায় এবং চুলে লাগাতে হবে।২ ঘন্টা পর হালকা গরম পানি দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলতে হবে।
* ভিনেগার ব্যাবহার করতে হবে
ভিনেগারে আছে অ্যাসিটিক অ্যাসিড যা উকুনের জন্য বিষের মতো।হালকা একটু ভিনেগার হাতে নিয়ে আঙ্গুলের সাহায্যে মাথার স্কেল্পে ম্যাসাজ করতে হবে এবং চুলে লাগাতে হবে
এতে খুব দ্রুত উকুন থেকে রেহাই পাবেন।যেখানে উকুনের আক্রমণ বেশি সেখানে বেশি করে ভিনেগার ব্যবহার করবেন।চুলের গোড়া এবং কানের পিঠে উকুন থাকার
সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি এই জন্য এই জায়গাগুলোতে বেশি করে ভিনেগার লাগাবেন।ভালো ফলাফল পেতে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ভিনেগার ব্যবহার করবেন।
* রসুন বেটে লাগাতে হবে
আপনি কি জানেন রসুনের তীব্র গন্ধে উকুন দূর হয়। উকুন দূর করতে চাইলে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার রসুন পাটায় বেটে পেস্ট করে মাথায় হালকা করে লাগাতে হবে এবং কানের পিঠে মাথার স্কেপ্লে ম্যাসাজ করতে হবে।
* ভেজা চুল আঁচড়াতে হবে
উকুন দূর করার জন্য ভেজা চুল আঁচড়াতে হবে এটি সবচেয়ে প্রাচীন এবং কার্যকারী উপায় মধ্যে একটি।বহু বছর থেকে মানুষ এই পদ্ধতিটি অনুসরণ করে আসছেন।
ভেজা চুলের মধ্যে উকুন পানিতে চুপসে থাকে ফলে তখন সরু দাত যুক্ত চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ালে উকুন নিচে ঝরে পড়ে। এভাবে নিয়মিত গোসল করার পর ভেজা চুল চিরুনি দিয়ে আঁচড়ালে
উকুন অনেকাংশ কমে যায় তবে এভাবে ভেজা চুল নিয়মিত আঁচড়ালে চুলের গোড়া নরম হয়ে যায় এবং চুল পড়ার আশঙ্কা আরো বেড়ে যায়।চুল ভেজা অবস্থায় আঁচড়ানো
কখনোই উচিত নয় চুল ভেজা অবস্থায় চুলের গোড়া নরম থাকে এবং চুলটি সহজেই পড়ে যায় এজন্য চুল পুরোপুরি শুকিয়ে নেওয়ার পর তখন আঁচড়াতে হয়।
মাথায় উকুন কেন হয় - উকুন দূর করার উপায় - শেষ কথা
আজ এই পোস্টে মাথায় উকুন কেন হয় এবং উকুন দূর করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করলাম।আশা করি আজকের এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগেছে এই পোস্টটি ভাল লেগে থাকলে অবশ্যই একটি কমেন্ট করে জানাবেন আর হ্যাঁ এমন পোস্ট আরও পেতে এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করবেন ধন্যবাদ।
ডিজিটাল লাইফ স্টাইলের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url